[Original English version can be read here]
১লা ফেব্রুয়ারি আল জাজিরা ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ (বাংলা শিরোনাম – ‘ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক’) ডকুমেন্টারি সম্প্রচার করে। এখন পর্যন্ত ৭৭ লক্ষাধিক বার ভিডিওটি ইউটিউবেই শুধু দেখা হয়েছে, বাংলাদেশে একে কেন্দ্র করে সর্বস্তরে আলোচনা চলছে। সরকার এবং সরকার সমর্থকরা ডকুমেন্টারির তীব্র বিরোধিতা করছে। কিন্তু এতে প্রকাশিত অভিযোগগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে খণ্ডন না করে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের চরিত্র হননে লিপ্ত হয়েছে তারা। ডকুমেন্টারি নির্মাতা ও সাক্ষাতকার প্রদানকারী ব্যক্তিদের চরিত্র হননের প্রচেষ্টা তো তারা চালিয়েই যাচ্ছে, সেই সাথে এর বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ডকুমেন্টারি তৈরিতে যুক্ত ছিল বলে অসত্য দাবী করছে এবং তাদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটনা করছে।
তাদের এই চরিত্র হনন অভিযান বিষয়ে বর্তমান এই লেখা, ডকুমেন্টারির বিষয়বস্তু নিয়ে না। আমি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মানহানিকর বিভিন্ন অভিযোগের শিকার হচ্ছি। একথা উল্লেখ করা জরুরি যে কোন জায়গা থেকেই আমাকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেবার সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা। এটা সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠিত নিয়ম যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ করলে তাকে সেসবের উত্তর দেবার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু কোন একটি সংবাদপত্র, অনলাইন সাইট, এবং টিভি স্টেশন আমাকে তা দেয়নি, এবং ক্রমাগত মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করে যাচ্ছে। এসব প্রচারের আগে আমার সাথে কোন যোগাযোগের প্রয়োজন তারা বোধ করছে না। আবারও বলি, উত্তরের সুযোগ দেয়ার বিষয়টা সাংবাদিকতার খুব অপরিহার্য একটা দিক।
তাদের এই চরিত্র হনন অভিযান বিষয়ে বর্তমান এই লেখা, ডকুমেন্টারির বিষয়বস্তু নিয়ে না। আমি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মানহানিকর বিভিন্ন অভিযোগের শিকার হচ্ছি। একথা উল্লেখ করা জরুরি যে কোন জায়গা থেকেই আমাকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেবার সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা। এটা সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠিত নিয়ম যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ করলে তাকে সেসবের উত্তর দেবার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু কোন একটি সংবাদপত্র, অনলাইন সাইট, এবং টিভি স্টেশন আমাকে তা দেয়নি, এবং ক্রমাগত মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করে যাচ্ছে। এসব প্রচারের আগে আমার সাথে কোন যোগাযোগের প্রয়োজন তারা বোধ করছে না। আবারও বলি, উত্তরের সুযোগ দেয়ার বিষয়টা সাংবাদিকতার খুব অপরিহার্য একটা দিক।
সরকারের মদদ প্রাপ্ত এসব অপপ্রচার অভিযান অবশ্য নতুন কিছু না। বিভিন্ন মানুষকে বাংলাদেশের মিডিয়া বা গণমাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হয়েছে – ২০১১ তে মোহাম্মদ ইউনুস থেকে শুরু করে ২০১৮ তে শহিদুল আলম পর্যন্ত বহু লোক এর ভুক্তভোগী। এদের মধ্যে অনেকে শুধু মানহানিকর মিথ্যার শিকার না, সাথে তারা ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল মামলাতেও আসামি হচ্ছে। মিথ্যা অভিযোগের এমন অভিযান নতুন না হলেও টিভি, সংবাদপত্র এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন হারে সংঘবদ্ধভাবে এই মিথ্যা কথা প্রচার করা হচ্ছে তা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বোঝা যাচ্ছে, সরকারের এখানে বেশ উদ্বিগ্ন।
ডকুমেন্টারিটা তৈরি করেছে আল জাজিরা। এতে আমার একটা ভূমিকা থাকলেও এর ভিডিও গ্রহণ, সম্পাদনা, প্রযোজনা — এসব কোন কিছুতেই আমি যুক্ত ছিলাম না। এ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা বাংলাদেশের মিডিয়াতে অনেকেই প্রচার করছে যে ডকুমেন্টারির নির্মাতা আমি। এর চেয়েও বেশি বানানো ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগও দেয়া হচ্ছে, যেমন, আমি আল জাজিরাকে টাকা দিয়েছি ডকুমেন্টারিটা বানাবার জন্য। একথা সম্পূর্ণ অসত্য।
অন্যান্য যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হচ্ছে সবই সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিশেষত এই দাবী যে আমার সাথে বিরোধী দল বা বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের আর্থিক বা রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। বা আরো অদ্ভুত দাবী যে আমি এসব দলের সমর্থক। বাংলাদেশে এটা চিরপরিচিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কোন সমালোচনাকারী পেলেই সরকার তাকে “জামাত সমর্থক” বানায়, বা “মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি” বানায়, “আওয়ামী বিদ্বেষী” বলা হয়। এসব অভিযোগের সবগুলো আমার বিরুদ্ধেও করা হয়েছে। বলা বাহুল্য এসব অভিযোগ বা দাবীগুলো মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন
প্রকাশিত কয়েকটি লেখায় দাবী করা হয়েছে আমি কিছু বৈঠকে ছিলাম বিরোধী দলের কিছু পরিচিত নেতার সাথে এবং সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আমি তাদের সাথে একমতে এসেছি। এসব দাবীর সাথে মাঝে মাঝে বিস্তারিত বর্ণনা থাকে যাতে মনে হয় ঘটনা নিশ্চয়ই সত্য। কিন্তু এসব তথ্য সম্পূর্ণ বানোয়াট। সম্পূর্ণ কল্পনা প্রসূত। আপনি এসব অভিযোগ দেখে থাকলে প্রমাণ হাজির করার দাবী করুন। তারা দেখাতে পারবে না, কারণ যা ঘটেনি তার কোন প্রমাণ নেই।
সম্প্রতি আবার এক স্থানে বলা হয়েছে যে আমি একটি পরিচিত বাংলাদেশি কোম্পানির ডিরেক্টর। আমি এখানে জানাতে চাই যে আমি বিশ্বের কোন স্থানের কোন কোম্পানির ডিরেক্টর, কর্মকর্তা বা মালিক নই।
অন্য কিছু লেখায় আবার দাবী করা হয়েছে যে আমার পরিবারের সদস্যরা ডকুমেন্টারি তৈরিতে জড়িত। আমার পরিবারের কোন সদস্য ডকুমেন্টারির কোন বিষয়ে কিছু জানতেন না। সম্প্রচারের আগ পর্যন্ত এতে দেখানো বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়েছে।
এসব কিছুর মূলে রয়েছে সাংবাদিকতা বিষয়ে কিছু ভুল ধারনা। যে ভুল ধারনা অনেকটাই ইচ্ছাকৃত ভাবে ধারণকৃত বলা চলে। সাংবাদিকের কাজ কি, সাংবাদিকতা কি উদ্দেশ্যে করা হয়, এবং বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কাজ কি তা সম্পূর্ণরূপে ভুল বোঝা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ধরে নিচ্ছে যে, যেসব সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন বা একাজে সাহায্য করেন তাদের সবার বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। তাদের পক্ষপাত আছে, দুরভিসন্ধি রয়েছে এবং তারা কোন বড় ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য এই সরকারকে উৎখাত করা বা এর ক্ষতি করা।
বাংলাদেশের আরো অনেক সাংবাদিকের মতোই আমি আমার কাজের মাধ্যমে — নেত্র নিউজ ও অন্যান্য মাধ্যমে — অন্যায় কাজ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদির খবর মানুষের কাছে জানাবার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আছে তা আমার বিবেচ্য বিষয়ই না। বিএনপি বা জামাত ক্ষমতায় থাকলেও আমি একই ভাবে এধরনের একটি ডকুমেন্টারি তৈরির কাজে সংযুক্ত থাকতাম। আমার নিজস্ব লেখালেখিও তখন হতো সেই সরকারের অন্যায় বিষয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ এর শেষ থেকে ক্ষমতায় আছে। ১১ বছরের বেশি হয়েছে। আমি সাংবাদিকতায় ফিরে এসেছি ২০০৯ এ। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। কাজেই অন্য কোন সরকার নিয়ে লেখার কোন সুযোগ ছিলনা। কিন্তু এর আগে ১৯৯৪ সালে আমি চ্যানেল ফোরে বানানো ডকুমেন্টারির কাজে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত ছিলাম। ‘দা ওয়ার ক্রাইমস ফাইল’ নামক এই ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয় যুক্তরাজ্য (ইউকে) প্রবাসী ৩ জন প্রাক্তন জামাত সদস্যের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সেসময় নিজেদের স্বার্থের পক্ষে যাবার কারণে আওয়ামী লীগ আমাকে সমাদর করেছে। আমি ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সাংবাদিকতা থেকে দূরে ছিলাম।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে আমি যা কাজ করেছি তা নিয়ে অনেক কিছু লেখা হয়েছে। সঠিক প্রক্রিয়া ও ন্যায় বিচার বিষয়ক কথা বললেই জামাতপন্থী বা যুদ্ধাপরাধী-পন্থী বলা হয়। বিষয়টা দুঃখজনক।
বাংলাদেশ সরকার এবং এর সমর্থকদের বোঝা প্রয়োজন যে, যিনি খবর প্রকাশ করেন তাকে হেনস্তা না করে তাদের উচিৎ হবে যা ঘটেছে তা থেকে শিক্ষা নেয়া, তদন্ত করা এবং সংস্কার করা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ফলাফল ক্ষমতাসীনদের জন্য আনন্দদায়ক হয় না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের উত্তর দেবার সম্পূর্ণ অধিকার সরকারের আছে, কিন্তু কোথায় ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে সেসব ধরিয়ে না দিয়ে যদি অনুসন্ধানকারীর মোটিভকে অভিযুক্ত করার অভিযানে নেমে যায় সরকার তা অন্যায় এবং এতে অনেক নিরপরাধ মানুষ ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এমন কর্মকাণ্ডে উল্টো মনে হয় যে সরকারের অনেক কিছু লুকাবার আছে।
No comments:
Post a Comment